মহাবিশ্বের সবকিছুই আল্লাহ তায়ালার ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহ তায়ালার (প্রতিপালকের) কোন নেয়ামত বা অনুগ্রহ কে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
আল্লাহ তায়ালার (প্রতিপালকের) কোন নেয়ামত বা অনুগ্রহ কে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
আমি নিজে আল্লাহ তায়ালার দেয়া নেয়ামত ও অনুগ্রহে বেঁচে আছি এবং জীবন যাপন করছি।
এরকম অনেক অলৌকিক ঘটনা আমার নিজের জীবনে ঘটেছে। আজ তারাই কয়েক টি ঘটনা তুলে ধরব।
ঘটনা-১ঃ
১৯৮৭ সালে আমি জন্ম গ্রহণ করি। মায়ের গর্ভে ৭ মাসের শিশু থাকার পরেই আমার জন্ম হয়। কম ওজন, চোখ না ফোটা এবং প্রস্রাবের রাস্তা চিকন হওয়ার কারনে অনেক সমস্যা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করি। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান হিসাবে হয়তো বেশি যত্ন ও চিকিৎসা পেয়ে বেঁচে ছিলাম। বিশেষ করে আমার মরহুম নানা ছিলেন ডাক্তার।
তার আপ্রাণ চেষ্টা ও প্রতিনিয়ত দেখাশুনার কারনে আমি আজও বেঁচে আছি। কিন্ত আমার আপসোস আমি নানার অসুস্থতার সময় পড়াশোনার কারনে খুব বেশিদিন পাশে থাকতে পারিনি। আর যে টুকু সময় ছিলাম হয়তো নিজের বোঝার কমতির কারনে খুব বেশি সেবা যত্ন করতে পারি নি।
আমি আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে আজও বেঁচে আছি।
ঘটনা-২ঃ
বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান হওয়া স্বত্তেও ঠিক জন্মের ৬-৭ মাস পরেই বাবার আদর, স্নেহ, ভালো বাসা থেকে বঞ্চিত হই। তার পর থেকে আজ পযর্ন্ত আমি আমার বাবার কাছে কোন দিন ঘুমাইনি। খুব একটা মনেও পরেনা কখনও বাবা বলে ডাকতে পেরেছিলাম কি না।
বাবা থাকা স্বত্বেও….. বাবা ছাড়া আমি আজও বেঁচে আছি।
আমি আল্লাহ তায়ালার কোন অনুগ্রহে অস্বীকার করবো।
ঘটনা-৩ঃ
২০০৪ সাল, আমার ইন্টারমেডিয়েট পরিক্ষা চলছে। পরিক্ষা খুব ভালোই হচ্ছিল। হঠাৎ এক পরিক্ষার দিন সকালে আম্মু বল্লো তিনি কোথায় যেন জরুরি প্রয়োজনে যাচ্ছে।
আমি যেন খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি পরিক্ষা দিতে যাই।
খাবার খাওয়া শেষ পরিক্ষা দিতে যাবো। তখন পরিক্ষার জন্য হার্ড বোর্ডের মত খাতার নিচে রাখার জন্য একধরনের বোর্ড ব্যাবহার করা হত। যেন লেখা সুন্দর হয়। সেই বোর্ড নিয়ে যখন রওনা দিব টিক সেই মহুত্তে দেখি আমার কাছে পরিক্ষার এডমিট কার্ড নেই। এডমিট কার্ড তো ছিল আলমারির ড্রয়ারে। ড্রয়ারের চাবি ছিল আম্মুর কাছে। তখন মোবাইল ফোন ছিল না। আশেপাশে আম্মু কে খুঁজে দেখার মতো সময়ও ছিল না। আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রেখে পরিক্ষার এডমিট কার্ড ছড়াই পরিক্ষা দিতে যাই। পরিক্ষার খাতায় আগের টেবিলের পরিক্ষার্থীর রোল এবং রেজিষ্ট্রেশন দেখে মিলিয়ে রোল নাম্বার ও রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার বসাই।
পরিক্ষার সকল সময় টুকু শুধু আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে ছিলাম। পরিক্ষা পরিদর্শক ও শিক্ষকরা যদি আমাকে এডমিট ছাড়া ধরে ফেলে তাহলে আমাকে বহিস্কৃত করবে ও হাজতে যেতে হবে।
আল্লাহ তায়ালার রহমতে খুবই ভালো ভাবে পরিক্ষা দিয়েছি এবং পরিক্ষা পরিদর্শক সকল ছাত্রছাত্রীদের নিকট থেকে পরিক্ষার এডমিট চেক করেছে কিন্তু আমার নিকট এসে আর এডমিট চায় নি। আল্লাহ তায়ালার নিকট অনেক অনেক শুকরিয়া।
আমি কেন আল্লাহ তায়ালার মুখাপেক্ষী হইবো না।
ঘটনা-৪ঃ
তখন ২০০৫ সাল আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে বগুড়া আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এ ভর্তির জন্য হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মেধাতালিকায় উর্তিন্ন হই। খুবই খুশি কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভর্তির ফি বাবদ যে টাকা দিতে হবে ঐ টাকা তখন আমাদের নিকট ছিল না।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের নোটিশ বোর্ডে টাংগিয়ে দেয়া হলো ৩ দিনের মর্ধ্যে নিদিষ্ট ফি জমা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। তা-না হলে ঐ আসন তাঁর পরবর্তী মেধাতালিকা যারা থাকবে তাদের কে দেয়া হবে। আমি ৩ দিনের ভিতরে টাক জোগাড় করতে পারি নি। ভর্তি হবার আশাও ছেড়ে দিয়েছি। মন অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এক মামার অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় কিছু টাকা নিয়ে ৬ (ষষ্ঠ) দিনে ভর্তির জন্য হিসাববিজ্ঞান বিভাগে আসি। কিন্তু ততদিনে ভর্তির সকল কার্যক্রম শেষ হয়ে গিয়েছে।
কি আর করার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ঠিক সেই সময় আমার এলাকার এক বড় ভাই এর সহযোগিতায় রাজনৈতিক এক লিডার কে নিয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এর নিকট যাই এবং প্রিন্সিপাল স্যারের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ঐ বিভাগেই ভর্তি হই। বিভাগীয় প্রধান এর দিকনির্দেশনা, নিজ প্রচেষ্টায় ও প্রফেসার দের সহযোগিতায় হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে হিসাববিজ্ঞানে অনার্স এবং মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস পেয়ে কৃতকার্য হই।
আমি আল্লাহ তায়ালার কোন সহোযোগিতা কে অস্বীকার করবো…?
ঘটনা-৫ঃ
জুন মাস, ২০১১ সাল। চাকরির আবেদন করেছিলাম। ডাক পরেছে ইন্টারভিউ এর জন্য। ইন্টারভিউ হবে ঢাকায় কোম্পানির হেড অফিস মতিঝিলে। কিন্তু ঢাকায় যাবার মতো কোন টাকা নাই। এলাকার এক বড় ভাই এর নিকট ধান বা চাল দেবার প্রতিশ্রুতিতে ২০০০ টাকা নিয়ে ইন্টারভিউ এর উদ্দেশ্যে রওনা হই।
চাকরি না পেলে এই টাকা পরিশোধ করার মত সুযোগ তখন ছিল না। এই টাকার চিন্তা তখন ঘোরপেঁচ খাচ্ছে।
ইন্টারভিউ দিতে এসে দেখি সকলের পরনে স্যুট কোট, পান্ট, টাই ইত্যাদি। আমি শুধু জিন্স প্যাট ও সার্ট পরে এসেছি। ঠিক তখনই মনে হয়েছে এই কোম্পানির চাকরিটা মনে হয় আমার আর হবে না। আমাকে আরও পরিপাটি হয়ে আসা দরকার ছিল।
একজন ইন্টারভিউ কেন্ডিডেট এর নিকট থেকে আমি তার ইন্টারভিউ পরিক্ষা দেবার পরে যেন আমাকে তার পরনের বেল্ট টি দেয় তার জন্য অনুরোধ করে ছিলাম। কিন্তু তাও পাইনি। আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছি। ইন্টারভিউ বোর্ডে আমাকে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়েছিল আমি এখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছি না ঘুরতে এসেছি। আমার সোজাসাপটা উত্তর ছিল ইন্টারভিউ দিতে এসেছি। উনারা বল্লো তাহলে এই পোশাকে কেন এসেছেন।
আমি বলেছিলাম আমার আর কোন অন্য পোশাক নেই। ইন্টারভিউ বর্ডের সকলেই বলেছিলেন যেন আমি অবশ্যই রেজাল্ট দেখে যা-ই। আল্লাহর উপর ভরসা করে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
ইন্টারভিউ এর রেজাল্ট দেখার পরে নিজেই বিশ্বাস করতে পারি নি। সবার প্রথমের দিকেই আমার নামটি ছিল।
আমি আল্লাহ তায়ালার রিজিক কে কেন বিশ্বাস করবো না…..?
ঘটনা-৬ঃ
আমি বাবার আদর স্নেহ পাইনি। দাদা দাদির ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। আর কোন নিজের ভাই বোন নেই। সবাইকে অনেক মিস করতাম এবং সবাইকে সবার জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মনে হত। ভাই বোনের প্রয়োজনীয়তা ও অভাববোধ করতাম।
বিবাহ করেছি আল্লাহ তায়ালা সন্তান দান করবেন এটাই স্বাভাবিক। সেই একই আশায় আমরাও ছিলাম। ছেলে হউক বা মেয়ে হউক কোন ধরনের পক্ষপাতিত্ব ছিল না। আল্লাহ তায়ালা নিকট ভরসা ছিল। আল্লাহ তাআলা যা দান করবেন তাতেই খুশি থাকবো।
দিন যাচ্ছে… বৌয়ের ৬-৭ মাস চলছে। ডাক্তার দেখাতে গেলাম। ডাক্তার আপা বললেন যমজ সন্তান হবে। আমি এবং আমর ওয়াইফ খুবই খুশি। তবে ডাক্তার আইডেন্টিটি নির্ধারন করতে পারছিলনা যে ছেলে হবে না মেয়ে হবে।
১৮ই জুন ২০২১ সাল, ডাক্তার যখন জন্মের পর আমাকে বাচ্চাদের দেখার জন্য ডাকলেন। আমি অপারেশন রুমে গেলাম দেখলাম আল্লাহ তায়ালা আমাকে একজন মেয়ে এবং একজন ছেলে দান করেছেন। আমি খুশিতে কান্না করেছি অনেক।
আল্লাহ তায়ালার আমাদেরকে নিয়ে কতই না সুন্দর পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
ঘটনা-৭ঃ
বর্তমান দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারনে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অনেক খারাপ সময় পার করতে হচ্ছে এবং সবাই রীতিমত হিমসিম খাচ্ছি। এই দুঃসময়েও আমি এক ব্যাক্তির সাথে কিছু সামান্য টাকা লেনদেন নিয়ে সমস্যায় পড়ি। নিজে নিজে ধর্য্য ধারন করে সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু কোন সমাধান পাচ্ছিলাম না।
আমি আল্লাহ তায়ালার প্রতি সর্বদা প্রফুল্লচিত্তে ভরসা রেখেছিলাম। আমি জানি আল্লাহ তায়ালা কোন-না কোন ভাবে আমাকে সহযোগিতা করবেন। তাই আমার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল তাদেরকে বিষয়টি যেনে রাখি।
ঠিক যা ভেবেছিলাম তাই ঐ ব্যাক্তির নিকটেও আমাকে যেতে হয়নি। আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে আমার নিকট নিয়ে এসেছে এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় আমি উক্ত সমস্যা থেকে উদ্ধার হতে পেরেছি।
আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই…!!!
আল্লাহ তায়ালা কতই না বরকতময়, আমাদের প্রতিপালক, যিনি মহামহিম, মহানুভব..!!!!
উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার…. অনিবার্য।
দুঃখ-কষ্ট, ব্যর্থতা, সাময়িক ক্ষতির সময়ও আল্লাহকে ভুলে না যাওয়া কিংবা আল্লাহর প্রতি বিরূপ মন্তব্য না করা। এ সময় সবর করার মাধ্যমেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। আর এখানেই রয়েছে বান্দার জন্য মহাপরীক্ষা। যারাই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তারাই সফল।
মনে রাখতে হবে……
দুনিয়া হলো পরীক্ষার স্থান। পরকালের সম্পদ লাভের জায়গায়। এখানে সবাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এ বিশাল পরীক্ষায় শুধু তারাই সফল হবে, যারা ঈমান এবং ধৈর্যকে একত্রে কাজে লাগাতে পারবে। প্রকৃত সফলতা তারাই পাবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ঈমানের মতো মহামূল্যবান সম্পদ লাভ করার তাওফিক দান করুন।
ঈমান ও ধৈর্যধারণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন….
Tags:Course